শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সঠিক উপায়

 
 
পুষ্টিবিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবার মুখে একটাই কথা কিভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও উন্নতি করতে হলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। হাতের নাগালে পাওয়া সবচেয়ে সস্তা এবং পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে দুধ হল অন্যতম। অথচ মানুষের সচেতনতার অভাবে অনেকেই এই পুষ্টি সম্পুর্ণ খাবারটি কথা জেনেও গুরুত্ব দেয় না
                     
একটা সময় ছিল মানুষের চাহিদা অনুপাতে দেশে দুধের ঘাটতি ছিল। বর্তমানে হাজারো পশু বিজ্ঞানী এবং ডেইরি খামারিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ এখন দুধের স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার বাস্তব প্রমান পাওয়া যায় DLS এর তথ্য মতে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তথ্য মতে ২০০৮ থেকে ২০০৯ এদেশের দুধ উপাদান ছিল ২২.৯লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৮_২০১৯ এ এসে দাঁড়ায় ৯৯.২৩ লক্ষ মেট্রিক টন। এই সহজ পরিসংখ্যান বলে দেয় দুধ আমাদের সকল মানুষের জন্য কতটা সহজলভ্য। পশু বিজ্ঞানীদের অবদানের কারণে দুধ হল আমাদের দেশের সবচেয়ে সস্তা পুষ্টিকর আদর্শ প্রাণীজ খাবার। দুধের গুনাবলি সম্পর্কে আমরা অবগত নয় বলে প্রত্যেকদিন বাইরে বিভিন্ন রকম দামি রঙিন খাবার খাই। নিজের শরীর নিজে কুড়াল মারি। এইসব রঙিন খাবারের ফলে প্রেসার, ডায়াবেটিস, মানসিক অশান্তি লেগেই থাকে। যে পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণ করবে তার উপর ভালো প্রভাব পড়বে।আরজে রঙিন অপুষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ করবে তার ওপর এর খারাপ প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। অথচ হাতের কাছে পাওয়া দুধের উপকারিতা আমার কাজে লাগাতে পারি না।চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে দুধই হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো একমাত্র হাতিয়ার। অসংখ্য পুষ্টির সমন্বয় দুধ গঠিত। দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, বি ১২, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, নিউ সিন, রিবোফ্লাভবন, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার।
                    
 #"মানুষের শরীর একটি দুর্গ বিশেষ। একে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে শরীর চর্চার মাধ্যমে অবশ্যই সুদৃঢ় করতে হবে "
   
#দুগ্ধজাত খাবার:
                           দুগ্ধজাত খাবার গুলো বিজ্ঞানের ভাষায় প্রবায়টিকস হিসেবে পরিচিত যেমন-দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি ।মানুষের পাকস্থলীতে যে আবরণ আছে সেটার ভিতরে বেশ কিছু উপকারী জীবাণু কার্যকরী হয়। বাংলাদেশে একজন চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন,"পাকস্থলীতে যদি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায় তখন সেখানে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে।"
                             দুধজাত খাবারগুলো পাকস্থলী তে উপকারী জীবাণু কে বাঁচিয়ে রাখে।ভিটামিন ডি এর জন্মদিনের কিছুটা সময় শরীরের রোদ্দুর লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন ,"যার শরীরের গঠন ভালো এবং সেখানে কোনো ঘাটতি থাকবে না তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হবে।
তিনি বলেন যেমন শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

১.দুধ ক্যালসিয়ামের সবচাইতে ভালো উৎস।আজকাল পেশীর ব্যথা ও দাঁতের ক্ষয় সব বয়সের লোকের মধ্যে দেখা যায়।নিয়মিত দুধ খেলে দুধে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে।এছাড়াও দুধে থাকা ক্যালসিয়াম ভিটামিন বি এর সাহায্যে পেশীর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি আমাদের বেশি মজবুত করে।

২.একটা সুস্থ মানুষের শরীরে প্রোটিন যে এত দরকার তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা।২১ধরনের অ্যামাইনো এসিড এর সমন্বয় প্রোটিন তৈরি হয় যার মধ্যে ৯টি আমাদের শরীরে তৈরি হয় না। আর এই ঘাটতি পূরণ করতে দুধের কোন বিকল্প নাই।

৩.কোলেস্টেরল নিয়ে আমরা সবসময়ই চিন্তায় মগ্ন থাকি।আমাদের সবার মনে একটা ভুল ধারণা বাসা বেধেছে যে কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। দুধে যে প্রোটিন থাকে তা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। অধিবিদ্যা মান ভিটামিন বি ১২ত্বকে নমনীয়তা বজায় রাখে সাহায্য করে ফলে অল্প বয়সে চামড়া ঝুলে যায় না ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং তারুণ্যে ভরপুর থাকে।
৪. হাতে রক্ত চলাচল সচল রাখতে নিয়মিত দুধ খাওয়া খুবই জরুরী। দুধে বিদ্যমান থাকা ভিটামিন এ বি ও ক্যালসিয়াম যা আমাদের হার্টে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৫. হৃদপিন্ডের পেশী সুস্থ্যতা বজায় রাখতে দুধের বিদ্যামান পটাশিয়াম এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া দুধে উপস্থিত খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং হৃদপিণ্ড সতেজ রাখে।
৬. দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড ও অ্যামাইনো এসিড। চুলে পুষ্টি জোগাতে চুল সুন্দর ও মজবুত রাখতে দুধের ভূমিকা অপরিসীম।
৭. গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। দুধে বিদ্যমান আয়োডিন ভ্রুণের মস্তিষ্ক বিকাশের ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া দুধে প্রোটিন, অ্যামাইনো এসিড,ফ্যাটি এসিড শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য প্রয়োজন।
৯.শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে দুধের ভূমিকা অনন্য।সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে দুধ হতে পারে প্রধান হাতিয়ার।
            
 #দুধ আল্লাহর প্রদত্ত এমন নেয়ামত যা সবাই সহজে হজম করতে পারে।প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে দুধের গুরুত্ব এতটাই অপরিহার্য যে ইসলাম ধর্মেও দুধের গুণাগুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে।বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান দুধের যে গুরুত্বের কথা বলে সে গুরুত্বের কথা ইসলাম আজ থেকে বহু বছর আগে ঘোষণা করেছেন।
             সকল মানুষের সেরা মানুষ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম। তিনি দুধ খুব পছন্দ করতেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় মেরাজের রাতে। আনাস ইবনে মালিক (রা:)থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন মেরাজের রাতে হযরত ইব্রাহিম আ: সম্মুখে তিনটি পেয়ালা তুলে ধরেন।অ্যাক্টিভ পেয়ালায় দুধ একটি তে মধু আর অন্যটিতে শরাব ছিল। আমি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলাম এবং ফান করলাম।তখন আমাকে বলা হল আপনি এবং আপনার উম্মার স্বভাবজাত বস্তু গ্রহণ করেছেন।সহজে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর এবং সস্তা পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় দুধকে পরিপূরক খাদ্য হিসেবে নয় মূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।আল্লাহ প্রদত্ত যতগুলো খাবার দেখি তার মধ্যে দুধ হল সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর।শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দুধের কোন বিকল্প নেই। তাই সব সময় মন প্রফুল্ল ও সতেজ এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হলে সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ অপরিহার্য।
 
 #চা-কফি কতটা খাবেন??
 অতিমাত্রায় চা-কফি পান করা শরীরের জন্য ভালো নয় বলে সতর্ক করে দিয়েছেন চিকিৎসক মি: কল্লোল।
 "ধরুন একজন ব্যক্তি যদি দিনে ৭ কাপ চা খায় এবং প্রতি কাপে এক চামচ চিনি থাকে তাহলে তিনি কিন্তু প্রতিদিন ৭চামচ চিনি খাচ্ছেন ।এই সাত চামচ চিনি শরীরের জন্য ভয়াবহ বলেছেন মি: কল্লোল।
 চা-কফি তে এমন অনেক উপাদান থাকে যার কোনটি শরীরের জন্য ভালো এবং কোনটি শরীরের জন্য খারাপ।
 
#ভাত বেশি খাবেন না:
 একজন মানুষ প্রতিদিন যে পরিমাণে খাবার খাবেন তার৬০% হওয়া উচিত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা।
 এরপর ৩০% হতে হবে প্রোটিনএবং ৫% মত থাকবে চর্বি জাতীয় খাবার। মি: কল্লোল বলেন"আমাদের দেশে দেখা যায় শর্করা প্রচুর খাওয়া হচ্ছে কিন্তু সে পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করা হয় না।তিনি বলেন অতিরিক্ত ভাব বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে সেটি শরীরের ভেতরে ঢোকার পর ফ্যাট বা চর্বি তে রূপান্তর ঘটে।
 
#প্রোটিন:
 প্রোটিন শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায়। রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শক্তি যোগায়। এই মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে উন্নত মানের প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল থেকে পেতে পারেন প্রোটিন। তবে লাল মাংস এড়িয়ে যাবেন। ভালো প্রোটিন এর কি উপকার লাল মাংস তা পাওয়া যায় না। প্রোটিনের এই ভোজ হচ্ছে শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য এক গ্রাম করে। অর্থাৎ কারো ওজন যদি ৬৮ কেজি হয়, তবে দৈহিক তার ৬৮ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন দরকার।
 
 #ভিটামিন সি:
 শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকর।ভিটামিন-সি মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট।ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।পাশাপাশি এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।যা মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হূদরোগ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এই ভিটামিন পরিচিত ফল এবং বিভিন্ন শাক সবজি যেমন: আমলকি, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমরা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি তে প্রচুর পরিমাণে থাকে।তবে যেহেতু আমাদের শরীরে ভিটামিন সি জমা করে রাখতে পারে না তাই প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈহিক ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি দরকার।
 
 #ভিটামিন বি ১২:
 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে ভিটামিন বি ১২ দারুণ কার্যকর। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার ডিমের ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। তবে যারা নিরামিষাশী তার শরীরে ভিটামিন বি ১২এর অভাব পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সম্পূরক নিতে পারেন।
 
ভ্রমণের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে এই মৌসুমের শরীর ঠিক রাখতে দরকার প্রয়োজনীয় পুষ্টি।ভ্রমণের অধিক ধকল ও শরীরের পুষ্টি কমে যাওয়ায় অনেকেই নতুন করে ভ্রমণে অনীহা দেখান। তাই চলতি মৌসুমে পরিপ্রেক্ষিতে শরীর সুস্থ রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ