রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দুই মেয়েকে বিয়ে দেন মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির কাছে, অন্যদিকে তাঁর ছোটো মেয়েকে এমন একজনের সাথে বিয়ে দেন, যার মোহরানা দেবার মতো সামর্থ্য ছিলো না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন পাত্রদ্বয়ের সাথে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেন, যারা ছিলেন- দ্বীনদার, চরিত্রবান, জ্ঞানী এবং বিচক্ষণ। ‘পাত্র ধনী কি-না’ এটা শর্ত ছিলো না। পাত্র যদি দ্বীনদার, চরিত্রবান, জ্ঞানী এবং বিচক্ষণ হবার পাশাপাশি ধনী হয়, তাহলে তো নুরুন আলা নুর, ভালোর উপর ভালো।
আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।” [সূরা আন-নূরঃ ২৪:৩২]
সমাজ বলে ‘চাকরি না পেয়ে বিয়ে করবা কেন?’ বাবা-মা বলে, ‘বিয়ে করে বউকে কী খাওয়াবা?’ মেয়েপক্ষ বলে, ‘ছেলে সরকারি চাকরি করে কি-না?’ এগুলো বলে বিয়েকে সমাজে ‘লকডাউন’ করে রাখা হয়েছে। সবগুলো প্রশ্নের মূল প্রশ্ন একটাই- রিযিকের চিন্তা।
অথচ আল্লাহ বিয়ের ব্যাপারে ‘গ্যারান্টি’ দিচ্ছেন- বিয়ে করো, রিযিক নিয়ে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই, অভাবী হলে আমি অভাবমুক্ত করবো (তাই বলে বিয়ে করে ঘরে বসে থাকবেন, আল্লাহ রিযিক দিয়ে দিবেন, এটাও না)।
সমাজের মুডকে আমরা ‘গড’ বানিয়ে নিয়েছি। সমাজের মুড যতোটা ইসলামের সাথে যায়, ততোটা মানছি। সমাজের যেই মুড ইসলামের সাথে যায় না, সেক্ষেত্রে আমরা ইসলাম ছেড়ে সমাজকে মানা শুরু করি। ক্রমে আমরা হয়ে উঠি সমাজপুজারী!
অভাবগ্রস্ত সাহাবী একজন আরেকজনের কাছে গিয়ে সাজেশন চাইতেন। “কী করবো বলো?” তখন একজন বলতেম, “তুমি কী বিয়ে করেছো?” উনি যদি ‘না’ বলতেন তাহলে উপদেশদাতা বলতেন, “তুমি বিয়েই করোনি, তাহলে তুমি অভাবমুক্ত হবে কিভাবে? তুমি কি কুর’আনে পড়োনি, অভাবমুক্ত হবার একটা উপায় হলো বিয়ে করা?” তারপর ঐ সাহাবী গিয়ে বিয়ে করতেন, দেখা যেতো কিছুদিন পর তিনি অভাবমুক্ত হয়ে যেতেন।
কিন্তু, আমাদের সমাজ শেখায়, আগে স্বচ্ছল হও, বউকে খাওয়ানোর মতো টাকা-পয়সা জমাও, তারপর বিয়ের নাম নিও। তাহলে, সেই সমাজকে জিজ্ঞেস করুন, কুর’আনের ২৪:৩২ আয়াতটি নিয়ে তোমার ‘তাফসীর’ কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের সবচেয়ে আদরের মেয়ে ফাতিমাকে (রাঃ) একজন অভাবগ্রস্তের হাতে তুলে দিয়েছেন, এটার ব্যাখ্যা কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রিয় সাহাবী যুলাইবিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যার হাতে কানাকড়ি ছিলো না, তাঁর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, এটার ব্যাখ্যা কী?
সমাজ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ব্যর্থ হবার পরও যদি আপনি সমাজের সাথে সুর মিলিয়ে চলেন, তাহলে আপনাকে আরো দুটো কথা বলে আমি লেখাটি শেষ করছি।
যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পরও বিয়ে করতে পারছেন না, তাদেরকে যে ক্যাটাগরিতে রাখা যায় তারা রোজা রেখে সংযম করছেন,
যদি সিক্স ডিজিট স্যালারির কোনো সফল পুরুষকে বিয়ে করেন তাহলে শুধু এই প্রাপ্তির জন্যই আপনাকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। প্রথম ত্যাগ করতে হবে আপনার প্রিয় কিছু স্বপ্নকে।
লাখ টাকা বেতন প্রাপ্ত সফল মানুষটাকে ছাত্রাবস্থায় প্রচুর পড়তে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে বসে থাকতে হয়েছে। মাসের পর মাস রাত জাগতে হয়েছে। ফলে তার চোখের নিচে থাকবে স্থায়ী কালশিটা, চোখে থাকবে মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথার অর্ধেক হবে টাক এবং দেখার মতো একটা ভুঁড়ি থাকবেই থাকবে।
আপনি একই সঙ্গে স্পাইক চুল, সিক্স প্যাক ফিগার, স্টাইলিশ সানগ্লাস আর ডানাকাটা চোখের অধিকারী কোনো সিক্স ডিজিট আর্নড পারসন পাবেন না।
সিক্স ডিজিট আর্নড পুরুষ দারুণ সচেতন হবে। সে কবির সিংয়ের মতো বাইক চালানোর সময় কিংবা গাড়ি চালানোর সময় তিন মিনিটের চুমুর আনন্দের চেয়ে তিন যুগ বেঁচে থাকার আনন্দকে প্রাধান্য দেবে। ফলে আপনার মনে হতে পারে, দুনিয়ার আনরোম্যানটিক মানুষকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। আপনি ভুল মানুষের সাথে আছেন।
তার অবশ্যই সকালে অফিস থাকবে। ফলে বৃষ্টি দেখে ছাদে চলে যাওয়া কিংবা ব্যালকনিতে বসে পূর্ণিমা উদযাপনের চেয়ে রাতে নিত্যদিনের কাজটা সেরে ফ্রেশ একটা ঘুম দিয়ে রিল্যাক্স মুডে অফিসে যাওয়াটা
জরুরি মনে হবে। ফলে আপনার মনে হবে আপনি শুধুই ভোগের বস্তু। উপভোগ বলে কিছু নেই আপনার জীবনে।
লাঞ্চ টাইমে তার মিটিং থাকবে। মিটিং হবে জুনিয়র কিংবা সিনিয়র কলিগদের সাথে। যাদের সামনে তাকে পারসোনালিটি বজায় রাখতে হয়। ফলে দুপুরে ফোন দিয়ে ‘কী খেয়েছো’ জিজ্ঞেস করলে সে চেয়ারে হেলান দিয়ে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলবে না, কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ খেয়েছি। সে ডানে বামে তাকিয়ে বলবে- রাখো, পরে কথা বলছি। মিটিং শেষে তাকে এমন সব কাজ করতে হবে যে বেশিরভাগ দিন পরে আর কথা বলা হয়ে উঠবে না।
সিক্স ডিজিট স্যালারির পারসনকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সারাদিন এক গাদা স্টাফকে পরিচালনা করতে হয়। কিংবা পরিচালিত হতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারা। ফলে বাসায় ফিরবে সে মেজাজ খারাপ নিয়ে। এমন সময়ে তুমি যদি মুনমুন মুখার্জির মতো দুনিয়ার আবেগ তাহেরির মতো ঢেলে দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’ আবৃত্তি শুরু করো, সে গলায় সেক্স অ্যাপিল এনে বলতে পারবে না ‘ভালোবাসি তোওওও ভালোবাসিইইই’। সে একটু বিরক্তই হবে।
আপনি একইসাথে গ্রামের নির্মল বায়ু আর শহরের সুযোগসুবিধা পাবেন না। আপনাকে যে কোনো একটা বেছে নিতে হবে। হয় অর্থ-বিত্ত নয়তো স্বস্তির জীবন। হয় ভোগ নয়তো উপভোগ। আপনি যেটাকে প্রাধান্য দেবে সেটা নিয়ে সুখে থাকেন। অন্যটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে যাবেন না। তাহলে দেখবেন জীবনে মরীচিকা ছাড়া আর কোনো অর্জন নেই।
অতএব, ইমোশনালি প্র্যাক্টিক্যাল হবেন না, প্র্যাক্টিক্যালি ইমোশনাল হোন।