বিশ্বজুড়ে প্রাচীনকাল থেকে কালোজিরা রান্নায় এবং মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সৃষ্টিকর্তার রহমতে কালোজিরার মধ্যে বিস্ময়কর ক্ষমতা নিহিত রয়েছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন: “তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি এতে রয়েছে”। (সহীহ বুখারীঃ ১০/১২১)
কালিজিরার পুষ্টিগুণঃ
কালিজিরা এর প্রধান উপাদানের মধ্যে আমিষ ২১, শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। প্রতি গ্রাম কালিজিরা পুষ্টি উপাদান হলো-প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম; ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম; নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম; আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম; ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম; কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম; জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম; ফোলাসিন ৬১০ আইউ। কালিজিরার অন্যতম উপাদান গুলোর মধ্যে আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এছাড়াও কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান যা হাজারও উপকার করে।
কালিজিরার স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
ডায়াবেটিসঃ Journal of Endocrinology & Metabolism এর একটি আর্টিকেল অনুসারে কালোজিরার তেলে অ্যান্টিবায়াবিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কালো জিরার তেলের ভূমিকা অপরিসীম। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে বেশ কয়েকটি উপায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
হৃদরোগঃ
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগ এর জন্য ঝুকিপূর্ণ। কালোজিরার তেল সেবন উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্য়কর। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৬ সপ্তাহ সকালে নাস্তা করার পরে ২ চা চামচ (১০ গ্রাম) কালোজিরার তেল সেবনের ফলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা বা এর তেল মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপঃ
নিয়োমিত কালোজিরার তেল সেবন উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ১ সপ্তাহের জন্য ১/২ চা-চামচ কালোজিরার তেল দিনে ২ বার সেবনে রক্তচাপের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টঃ
হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা দূর করতে কালোজিরা বেশ উপকারী। কালোজিরার তেল এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব শ্বাসনালীতে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৪০০ মিলিগ্রাম কালোজিরার তেল এর ক্যাপসুল ৪ সপ্তাহ ধরে দিনে দুবার গ্রহণের ফলে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে কার্য়কর হয়েছে।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিকঃ
বদহজম বা পেট খারাপের সমস্যা থাকলে কালোজিরা সেবন অনেক বেশি উপকারী। কালোজিরা সামান্য ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম হারে ৭-৮ চা চামচ দুধে মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে সাত দিন ধরে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
খুবই যুগোপযোগী আর তথ্যবহুল একটা লেখা!