আমাদের আশেপাশের
গাছ গুলির মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত একটি ঔষধি গাছ। নিম এমন একটি ঔষধি
গাছ যার ডাল, পাতা,
রস সব কিছু কাজে
লাগে। এটি বহুবর্ষজীবী ও
চিরহরিৎ জাতীয় বৃক্ষ। নিমগাছে আছে ১৩০টি ঔষধি গুণগুন।
নিম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসেবে খুবই কার্যকর। নিমের বৈজ্ঞানিক নাম হলো আজাদীরচত
ইন্ডিকা। ঘরোয়া ওষুধ হিসেবে নিম পাতা খুবই কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের আশেপাশে
নিম গাছ খুব সহজেই পাওয়া যায়।
নিম
পাতার গুনাগুন বা উপকারিতা :
১. চুলকানি
বা খোস পাচড়া
নিম এর মধ্যে
রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা শরীর থেকে যে কোন রোগ জীবাণুকে সরাতে সহায়তা
করে। ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়ারোধক, ভাইরাসরোধক, হিসেবে নিম পাতা ব্যবহৃত হয়। নিম পাতা
সিদ্ধ করে সেই সিদ্ধ জল দিয়ে গোসল করলে খোস পাচড়া দূর হয়ে যায়।
২. কৃমিনাশক
শিশুদের পেটে
কৃমি বেশি হয়ে থাকে। ফলে খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। পেটে বড় হয় বা ফুলে যায় ও চেহারা
ফ্যকাশে মতো হয়ে যায়। শিশুরা রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। শিশুদের কৃমি নির্মূল করতে নিম
পাতার জুড়ি নেই। শিশুদের পেটে কৃমি নির্মূল করতে ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের
ছালের গুড়া দিন ৩ বার সামান্য গরম পানিসহ খেতে হবে।
৩. রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে নিম
নিয়মিত নিম
পাতা খেলে রক্ত চলাচলের পথ প্রশস্ত হয় এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তা নিয়ন্ত্রিত
হয়। নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে ও শর্করার মাত্রা কমায়। পাশাপাশি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে
হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। দৈনিক খালি পেটে এক কাপ জলে মধু মিশিয়ে এবং নিম পাতার
রস মিশিয়ে খাওয়া গেলে এটি শরীরের রক্ত চলাচল কে ত্বরান্বিত করতে পারে।
৪. অ্যাজমা
নিয়ন্ত্রণে নিম
নিম গাছের ফল
এবং বীজ থেকে পাওয়া নিম তেল হাঁপানির চিকিৎসায় সহায়তা করে। নিম কফ, জ্বর এবং কাশি
নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কয়েক ফোঁটা নিম তেল পান করলে অ্যাজমা
কিংবা হাঁপানির মতো সমস্যাগুলি থেকে দূরে থাকা যায়। মূলত হাঁপানি নিরাময়ে নিমের তেল
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র থেকেই ব্যবহার শুরু হয়।
৫. ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে নিম
নিম রক্তে শর্করার
পরিমাণ হ্রাস করতে নিমের সাহায্য করে, একারণে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান। ডায়াবেটিসজনিত অক্সিডেটিভ চাপ প্রতিরোধ করতে পারে নিম।
৬. কুষ্ঠ রোগ
নিরাময়ে নিম
নিম মিউটেজেনিক
অর্থাৎ এটি কোন ব্যক্তির ডিএনএতে কোন রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। গবেষণায়
দেখা গেছে, নিম গাছের বীজ ও ফল থেকে তৈরি তেল কুষ্ঠ রোগের নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে
পারে। তবে নিম বীজের তেল গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৭. ক্যান্সার
নিরাময়ে নিম
নিম পাতায়
রয়েছে লিওমনোয়েডস এবং পলি স্যাকারাইডস নামক দুটি উপাদান যা আমাদের রক্ত থেকে টিউমার
এবং ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করতে সহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিম পাতার নির্যাস
প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। কোষ বিভাজন এবং প্রদাহ জনিত
সমস্যা গুলিতে বাধা দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় নিম পাতা সহায়তা করে থাকে। স্তন ক্যানসারের
চিকিৎসায় নিম কার্যকর হয়েছে।
৮. জন্ডিস নিরাময়ে
নিম
নিমপাতার রস
ও নিম বীজ থেকে আসা রস খেলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার ভালো হয়। জন্ডিস নিরাময়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার
রসের সাথে মধু মিশিয়ে
খেতে হবে। মধুর সাথে ২৫–৩০ ফোঁটা নিম
পাতার রস মিশিয়ে ১
সপ্তাহ খেলে জন্ডিস থেকে
রক্ষা পাওয়া যায়।
৯. আলসার চিকিৎসায়
নিম
যে কোন ধরনের
পেটের রোগ, আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় নিমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রয়েছে। পেটের আলসারের ক্ষেত্রে নিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে যদি দৈনিক জলে মিশিয়ে খেলে
সমস্যাগুলির সমাধান হতে পারে। এছাড়াও নিম পাতার ব্যবহারের ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা
কিংবা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমে যায়।
১০. ব্রণ নিরাময়ে
নিম
যাদের ত্বক
তৈলাক্ত তাদের একটি বড় সমস্যা হল ব্রণ। মুখে ব্রনের দাগ কমাতে নিম পাতা এবং হলুদের
পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং উজ্জ্বল হয়।
এছাড়া চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে ও নিম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: পুদিনা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা